রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৬:৫০ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
স্বেচ্ছাসেবক লীগের র‌্যালি থেকে ফেরার পথে ছুরিকাঘাতে কিশোর নিহত দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চরম তাপপ্রবাহ আসন্ন বিপদের ইঙ্গিত দ্বিতীয় ধাপে কোটিপতি প্রার্থী বেড়েছে ৩ গুণ, ঋণগ্রস্ত এক-চতুর্থাংশ: টিআইবি সাড়ে ৪ কোটি টাকার স্বর্ণসহ গ্রেপ্তার শহীদ ২ দিনের রিমান্ডে ‘গ্লোবাল ডিসরাপ্টর্স’ তালিকায় দীপিকা, স্ত্রীর সাফল্যে উচ্ছ্বসিত রণবীর খরচ বাঁচাতে গিয়ে দেশের ক্ষতি করবেন না: প্রধানমন্ত্রী জেরুসালেম-রিয়াদের মধ্যে স্বাভাবিককরণ চুক্তির মধ্যস্থতায় সৌদি বাইডেনের সহযোগী ‘ইসরাইলকে ফিলিস্তিন থেকে বের করে দাও’ এসএমই মেলার উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী ইরান ২ সপ্তাহের মধ্যে পরমাণু অস্ত্র বানাতে পারবে!
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ও ভর্তি ফির নিয়মনীতি নেই

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ও ভর্তি ফির নিয়মনীতি নেই

স্বদেশ ডেস্ক:

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, সেমিস্টারসহ আনুষঙ্গিক সব ফি আদায়ে কোনো নিয়মনীতি নেই। একটি নীতিমালার খসড়া হলেও চূড়ান্ত হয়নি অদৃশ্য কারণে। উচ্চ মাধ্যমিক ফল প্রকাশের পর ইতোমধ্যে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয়। চলতি ভর্তি মৌসুমেই একটি নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা।

অভিভাবকদের অভিযোগ, প্রায় তিন দশক ধরে নতুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ফি-সংক্রান্ত কোনো নীতিমালা তৈরি করতে পারেনি সরকার। নীতিমালা না থাকায় অনিয়ন্ত্রিত ফি আদায় করছে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।

শিক্ষাবিদরাও বলছেন, শিক্ষাদানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মুনাফালোভী না হয়ে সেবার ব্রতী হওয়া উচিত।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফি, টিউশন ফি এবং শিক্ষকদের বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য বিষয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। এ ছাড়া ট্রান্সক্রিপ্ট, সার্টিফিকেট ও প্রশংসাপত্র ইত্যাদি সরবরাহ করতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উচ্চহারে ফি নেওয়ার হাজার হাজার অভিযোগ আসে ইউজিসিতে। কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রতিবছরই সব ফি বৃদ্ধি করে। এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের শিক্ষার্থী ফি যৌক্তিক পর্যায়ে আনতে চায় ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।

শিক্ষার্থী ফি বিষয়ে কমিশনের ৪৭তম বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ভর্তি ও টিউশন ফি এবং শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বিষয়ে ভিন্নতা ও অসামঞ্জস্যতা রয়েছে। যেহেতু দেশের সব অঞ্চলের আর্থসামাজিক অবস্থা সমান নয়, সেহেতু শিক্ষার্থীদের প্রদেয় বিভিন্ন ফি ও চার্জ একটি যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণ করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকার-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নির্দেশনা দিতে পারে।

এ প্রসঙ্গে ইউজিসির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহ আমাদের সময়কে বলেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফি নেওয়ার ক্ষেত্রে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় নানা অসামঞ্জস্যতা দেখা যায়। সরকারের পক্ষ থেকে সুনির্ধারিত নির্দেশনা না থাকার সুযোগে তারা নিজেদের ইচ্ছামতো ফি নির্ধারণ করছে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় টিউশন ফির বাইরেও বিভিন্ন খাতে মোটা অংকের ফি নির্ধারণ করছে। তাই কমিশন চায়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ফির বিষয়টি যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসা হোক। নীতিমালা না থাকায় তাদের বিরুদ্ধে জোরালো পদক্ষেপ নিতে পারে না ইউজিসি।

জানা গেছে, ২০১৩ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফি, টিউশন ফি নির্ধারণের বিষয়ে তৎকালীন ইউজিসি চেয়ারম্যান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি নীতিমালার খসড়া দেন। এরপর দীর্ঘ আট বছরেও ওই নীতিমালার বাস্তবায়ন হয়নি। ইউজিসির সেই উদ্যোগ অঙ্কুরেই থেকে গেল বছরের পর বছর। ড. শহীদুল্লাহ বলেন, তার যোগদানের আগে হয়তো বিষয়টি ছিল।

সম্প্রতি কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের খরচের হিসাবে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের পছন্দের শীর্ষ থাকা বিষয়গুলোয় পড়াশোনার খরচ মধ্যবিত্ত শিক্ষার্থীদের নাগালের বাইরে। এই বছর এ খরচ আরও বাড়তে পারে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় বিবিএ পড়তে খরচ সাড়ে ৩ লাখ টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা, এমবিএতে ২ লাখ থেকে তিন লাখ, সিএসই ৩ লাখ থেকে সাড়ে ৫ লাখ, ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক পড়তে ৩ লাখ থেকে সাড়ে ৪ লাখ, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিংয়ে ৩ লাখ ৫০ হাজার থেকে ৪ লাখ, ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে (ইসিই) ৩ লাখ থেকে ৫ লাখ এবং সাংবাদিকতায় স্নাতক পড়তে ৩ লাখ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা দিতে হয়।

রাজধানীর বসুন্ধরায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাজনীন মৌসুমি জানান, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ হয়নি। তাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ই ভরসা। কিন্তু এখানে যে লেখাপড়ার খরচ, তাতে পরিবারকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এক ভর্তিচ্ছুর অভিভাবক ইনামুল হক চৌধুরী বলেন, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বেসরকারিতেও একটি নীতিমালা থাকা দরকার। এ প্রসঙ্গে শিক্ষাবিদ, গবেষক ও ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা সহজলভ্য ও সব শ্রেণির জন্য উন্মুক্ত করা প্রয়োজন। এ জন্য শিক্ষার্থীদের প্রদেয় বিভিন্ন ফি ও চার্জ সহনীয় পর্যায়ে রাখা অত্যাবশ্যক। যতদূর জানি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০-এ ভর্তি ফি সহনীয় পর্যায়ে রাখার কথা উল্লেখ আছে। কিন্তু আইনের বাস্তবায়ন নেই।

তিনি বলেন, মেধাবী ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা লাভের পথ আরও সুগম করতে হবে। শিক্ষাদানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মুনাফালোভী না হয়ে সেবার জন্য ব্রতী হওয়া প্রয়োজন।

উল্লেখ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০-এর ৪২নং অনুচ্ছেদে উল্লেখ রয়েছে- ‘প্রত্যেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় উহার প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহ করিবার নিমিত্ত শিক্ষার্থীদের জন্য দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার মানদণ্ডে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি শিক্ষার্থী ফি কাঠামো প্রস্তুত করিয়া বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে অবহিত করিবে। কমিশন অবহিত হওয়ার পর প্রয়োজনে পরামর্শ প্রদান করিতে পারিবে।’

ইউজিসির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে ১০৮টি। এগুলোয় শিক্ষার্থী তিন লাখের বেশি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877